ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে পতনের পর বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন কোণঠাসা। দলটির ওপর চাপানো হচ্ছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং রক্তপাতের দায়। স্বৈরাচারের তকমা নিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে পড়েছে দলটি।
কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছেন। তবে এ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলের নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, স্বচ্ছ রাজনীতি করার প্রতিশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ সুযোগ পেতে পারে। তবে এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার অনুমতি দিতে পারে শুধু শহীদ পরিবার। তবে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, সবার জন্য নির্বাচনের পরিবেশ উন্মুক্ত রাখলে বিতর্কমুক্ত থাকবে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের তকমা পাওয়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, যিনি এক সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিলেন। এলডিপি গড়ার আগে দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন কর্নেল অলি।
আওয়ামী লীগের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা চান, এমন প্রশ্নে ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার প্রসঙ্গ টানলেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছিল, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
কেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন অনাস্থা? এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই দলটিকে শেখ হাসিনা সিস্টেমেটিকলি রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয় বিএনপি। তবুও আমীর খসরু জানান উদারপন্থি দল হিসেবে সবার রাজনীতি করার অধিকার চায় বিএনপি। তিনি বলেন, সকলের রাজনীতি করার অধিকার আছে। কেউ যদি স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চায়, আমার মনে হয় দেশের মানুষ স্বাগত জানাবে।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার দায়ে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি দলকে নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ টেনেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ইচ্ছার ওপর। তিনি বলেন, যারা দেশের জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে নির্বিচারে, তাদের কি এত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশাধিকার দিবে? তারা কি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার মতো অবস্থায় বর্তমানে আছে?
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানিতে হিটলারের দল ২০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিল যদি আমি ভুল না বলে থাকি। কেন? তাদের দেশের অভ্যন্তরে গণহত্যা চালানোর জন্য। অনেকটা কি বাংলাদেশের গণহত্যার সঙ্গে সদৃশতা পাওয়া যায় না?’
তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পেন্ডুলামের মতো ঝুলে থাকলে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কি? অংশগ্রহণমূলক হবে নাকি সেই একদফা ভোটের পুনরাবৃত্তি? এ প্রসঙ্গে রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘তারা আসলো বা আসলো না, সেটা বড় বিষয় না। কিন্তু আপনি তাকে বাধা দেবেন না বা দিচ্ছেন না, এরপর যদি তারা নির্বাচনে না আসে এই দায়-দায়িত্ব তো কেউ নেবে না। এটার ওপর তো নির্বাচনের বৈধতা, অবৈধতা নির্ভর করবে না।’
এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিচারের মাধ্যমে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ।

previous post