চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটে। হত্যাকারীরা মাইক্রোবাসে করে এসে তাকে গুলি করে। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল ছিল শমসের পাড়া এলাকার ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং হত্যার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিহত তাহসীন চান্দগাঁও এলাকায় ইট বালুর ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে, চট্টগ্রাম নগরীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ও তার সঙ্গীরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। তারা মাইক্রোবাসে করে এসে তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, খুনের ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি সন্ত্রাসী সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। সাজ্জাদসহ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, দুপক্ষের বিরোধের জেরে গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাহসীন নামে ওই যুবককে কারা খুন করেছে বা কোন দলের সাথে যুক্ত ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আছে। মরদেহ উদ্ধার করে চমেকের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ইট বালু ব্যবসায়ী তাহসীন শমসের পাড়ার উদুপাড়া এলাকায় আসেন বিকেলে। সেখানে ব্যবসার ইট বালু স্তূপ করে রাখেন। তাহসীন অবস্থানের কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি মাইক্রোবাস আসে। সেখানে দলবল নিয়ে ছিলেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। সন্ত্রাসীরা প্রথমে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে তাহসীনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর সাজ্জাদ ও তার সঙ্গে থাকা যুবক মাহমুদ ও হাছান গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকেন। গুলি তাহসীনের পায়ে ঊরুতে লাগলে লুটিয়ে পড়েন তাহসীন। গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তাহসীন।
আশপাশের লোকজন হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলেও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত তাহসীনের মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ তাহসীনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত আফতাব উদ্দিন তাহসীন চট্টগ্রাম নগরীর ওমর গনি এমইএস কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার খুনের পেছনে শমসের পাড়া এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার ও সাজ্জাদ গ্রুপের দীর্ঘদিনের বিরোধ জড়িত। তাহসীন সাজ্জাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সারোয়ার গ্রুপের সমর্থক ছিলেন। যদিও তিনি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তবুও শিবিরকর্মী সারোয়ার গ্রুপের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিরোধের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তাহসীনকে গুলি করে হত্যার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তার পাশে ছোপ ছোপ রক্ত এবং গুলির খোসা পড়ে রয়েছে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
তাহসীনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে আসার পর তার পরিবারের সদস্যরা বিকেলে মর্গের সামনে ছুটে আসেন। সেখানে তার বাবা মোহাম্মদ মুছা শোকের তীব্রতায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার মা ও অন্যান্য স্বজনদের কান্না এবং আহাজারিতে মর্গের সামনে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে, যা ঘটনাটির শোকাবহ পরিস্থিতি আরো প্রকাশ করে।
পরে তাহসীনের বাবা মুছা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার ছেলেকে সাজ্জাদ খুন করেছে। সাজ্জাদ আর কত লাশ ফেলবে জানতে চাই। আমার ছেলের খুনের বিচার চাই।’
চট্টগ্রামে একসময় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ হোসেনের নাম এখনো সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত। বর্তমানে তার সহযোগী, একই নামের আরেক সাজ্জাদ, নগরীতে বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। এই নতুন সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি এবং খুনের একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মোহাম্মদ জামালের ছেলে এবং প্রায় ২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
গত ১৭ জুলাই সাজ্জাদকে পুলিশ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং পুনরায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর বড় একটি এলাকায় তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করছেন, যার ফলে ওই এলাকার অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তার বাহিনীর তৎপরতা নগরীর বিশাল অংশের মানুষের জন্য ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।