গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনের সড়কে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের একটি দল বিক্ষোভ শুরু করে। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে কয়েক শ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি সামাল দেন।
শেষ পর্যন্ত ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীদের কেউ বঙ্গভবনের গেটের কাছে যেতে পারেননি। তবে ব্যারিকেডের উল্টো পাশেই অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাঁরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা একাধিক ব্যানারে সেখানে অবস্থান করেন। বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম (সময় বেঁধে দেওয়া) দেন। কেউ আধা ঘণ্টা, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ ছয় ঘণ্টা, কেউবা ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। উল্লেখ্য, বঙ্গভবন একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও বাসভবন।
বঙ্গভবনের সামনে চলমান উত্তপ্ত বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ১০টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারজন প্রতিনিধি দুই দফায় বিক্ষোভকারীদের সামনে আসেন। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের এই প্রতিশ্রুতি বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশকে আশ্বস্ত করে। ফলে, রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরিয়ে নিতে গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে সেখানে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ (গত রাতে কমিটি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন)। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে রাত ১১টার দিকে সড়কের রাখা লোহার প্রতিবন্ধকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, বঙ্গভবনের সামনের পরিস্থিতি কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এমন পরিস্থিতি থাকলে সুবিধাবাদীরা সুযোগ নেবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি পদে থাকতে পারবেন না। তাঁকে চলে যেতে হবে। সুতরাং বঙ্গভবনের সামনে আর অবস্থান করার কিছু নেই। যাঁরা এখানে থাকবেন, তাঁদের নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে।
রাত সোয়া ১১টার দিকে, যখন বিক্ষোভকারীদের একটি বড় অংশ তখনও বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান করছিল, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম সেখানে যান। তাঁরা লোহার প্রতিবন্ধকের ওপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু পরবর্তী রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত হওয়ার আগে যদি এই রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপতিহীন করে ফেলা হয়, তাহলে বিদেশি শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। তা হতে দেওয়া যাবে না। তাই আগামী দুই দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার সবার সঙ্গে পরামর্শ করে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হবে, যাঁকে নিয়ে কোনো বির্তক থাকবে না। তারপর মো. সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হবে।
এ পরে বক্তব্য দেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, পদত্যাগের জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে বুধ ও বৃহস্পতি, এই দুই দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে ছাত্র–জনতা এক হয়ে আবার আন্দোলনে নামবে। তিনিও বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
হাসনাত ও সারজিসের বক্তব্যের পর বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই চলে যায়। রাত পৌনে দুইটার দিকে বাকিরাও বঙ্গভবন এলাকা ছেড়ে যান।
পুলিশের ওপর হামলা
রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও তীব্র আকার ধারণ করে যখন অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য রাজউক ভবনের উল্টো দিকের ফুটপাত ধরে বঙ্গভবনের পাশের গুলিস্তানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ হঠাৎ করে পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং ধাওয়া দেয়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো হয়। এই অতর্কিত হামলার মুখে পড়ে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
এর কিছুক্ষণ পর, বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনের কাছাকাছি থাকা পুলিশের একটি গাড়িতেও আক্রমণ চালায়। তাঁরা গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এই সহিংসতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
previous post