বাংলাদেশে বেড়ে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ইসলামি চরমপন্থার সম্ভাব্য উত্থান নিয়ে সতর্ক করেছে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের সর্বদলীয় গ্রুপ এএপিজি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এএপিজি এই সতর্কতা জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দ্রুত অস্থিতিশীলতার কারণে ইংল্যান্ড আরেকটি বৈশ্বিক সংঘাতের মুখোমুখি হতে পারে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামপন্থী চরমপন্থীদের উত্থান ঘটে চলেছে।
এএপিজি শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ২ হাজারের বেশি নৃশংস ঘটনা রেকর্ড করেছে কমনওয়েলথের জন্য। তারা মনে করছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আইনি ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিবেদনে ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপট নিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়লে এর প্রভাব ইংল্যান্ডও পড়তে পারে। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাস করেন। এটি মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ।
এএপিজি চেয়ারম্যান ও কনজারভেটিভ পার্টির এমপি অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল বলেছেন, কমনওয়েলথ অংশীদারদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি পদক্ষেপ এই প্রতিবেদন। তিনি জানান, প্রতিবেদনটি সরকার, দাতব্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথ সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীদারদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। তিনি মনে করেন, ওয়েস্টমিনস্টার ও হোয়াইট হলে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে এবং প্রতিবেদনটি সংসদ সদস্য ও নীতি নির্ধারকদের সহায়তা করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়- ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অনেকেই এই ঘটনাকে আনন্দ ও আশার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। তবে আমরা এমন কিছু প্রমাণ পেয়েছি যা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি। মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করাও অপরিহার্য।
এএপিজি জানিয়েছে, তারা প্রমাণ পেয়েছে, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, সাবেক বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অসংখ্য হত্যা মামলা করা হচ্ছে। এই মামলাগুলোর সংখ্যা এতো বেশি যে, সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের তিন মাস পরও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক রয়ে গেছে।
সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর অভিজ্ঞতা অঞ্চলভেদে ভিন্ন। আইন-শৃঙ্খলার অভাবই এ ধরনের ঘটনার প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রশ্নে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫ আগস্টের পর হিন্দু মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ হিন্দু অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সহিংসতার ঘটনার পর তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
