পদত্যাগ করেননি জানিয়ে শেখ হাসিনা এও বললেন, তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবেন। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে, তার কোনো কিছুই বৈধ না।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
বাংলাদেশে সরকার পতনের পর চার মাস পর নেতাকর্মীদের দেখা দিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোর গলায় বলেছেন, পদত্যাগ করেননি। বাংলাদেশে ক্ষমতায় যারা আছে সবাই অবৈধ, সংবিধানে এর কিছু নেই, তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবেন।
নেতাকর্মীদের সবাইকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন কেউ যেন মনোবল না হারায়। বলেছেন, তিনি ফিরে আসবেন।
অ্যামেরিকার নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ভারতে উড়ে যাওয়ার পর এই প্রথম তার দেখা পেলেন নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদেরকে তিনি বলেন, ‘আমি আসব বলছি মানে আমি আসবই। কখন আসব, কীভাবে আসব সেটার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে বলো।’
শেখ হাসিনা ভারত যাওয়ার পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দাবি করেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন, চাপের মুখে একই কথা বলতে বাধ্য করা হয় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে।
তবে পরে মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এরপর রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো ক্ষমতা ছেড়ে আসিনি, আমি তো পদত্যাগ করি নাই। এখন যারা আছে সবই অবৈধ প্রক্রিয়া, সংবিধানে এর বৈধতা নাই।’
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন ‘সংবিধান বলে একটা কথা আছে, আমরা সাংবিধানিকভাবে লড়ব। প্রয়োজন হলে নেতাকর্মীদের নিয়ে আন্দোলন করব, তবুও স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে দেব না।’
চার মাস বয়সী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশবাসীকে অনেক প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিল। কিন্তু এই চার মাসে দেশে চরম নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। হামলা, ডাকাতি, খুনোখুনি আর দল বেঁধে যখন তখন হামলার কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ।
শ্রমিক বিক্ষোভে উৎপাদন ব্যাহত, ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দাবস্থা, যখন তখন রাস্তা বন্ধের কারণে মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াত বন্ধ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর চলছে বেপরোয়া হামলা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে উঠে পিটুনির ভিডিও পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।
আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করে চাঁদাবাজি চলছে বেশুমার। মামলার বাদী জানেন না আসামি কারা। এ নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও চলছে আলোচনা। যুক্তরাজ্যের কমনওয়লেথ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ-এপিপিজি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৪ আগস্টের আগের তুলনায় ৪ আগস্টের পরে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা পিটিয়ে মানুষ মারছে, এই রাজনীতি তো আমরা করি নাহ। টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, কাউকে এভাবে মরতে হয় নাই।’
সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি বলে নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভেঙে পড় না, মনোবল শক্ত রাখ।’
এখন যা যা হচ্ছে, তাতে মানুষের হুঁশ ফিরবে বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। বলেন, ‘ওদের মুখোশ মানুষ চিনুক। অধৈর্য হওয়ার দরকার নাই। মানুষের বোঝার প্রয়োজন আছে। দেশের মানুষের জন্য কী করি নাই, কী দেই নাই? তবুও মানুষ গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে। এখন হারে হারে টের পাবে।’
টানা সাড়ে ১৫ বছরে দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের যোগ্যতা অর্জন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। একথা তো দেশের ছোট-বড় সবাই জানে, বিশ্ববাসীও জানে। আমি নিজের জন্য কিছুই করি নাই। আমার চিন্তা দেশের মানুষের জন্য। দেশবাসীর জন্য আমার বাবা মা সহ আত্মীয়স্বজন সবাইকে জীবন দিতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমাকেও দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে হয় জীবন দিব। কিন্তু মানুষের অধিকার আদায়ে জীবন থাকতে কেউ আমাকে মানুষ থেকে দূরে রাখতে পারবে না।’
এখন যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চলতে থাকলে দেশের মানুষই তাদেরকে (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিহত করবে বলেও নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘তোমরা এসব প্রচার করো, কোথায় কী হচ্ছে সেগুলো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাক।’
ভার্চুয়াল আলোচনায় একজন বলেন, ‘আপা, আপনার আশায় লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী পথ চেয়ে বসে আছে, সবাই ঘরবাড়ি ছাড়া। অনেকের পরিবারের উপর হামলা হয়েছে, ঘরবাড়ি, ব্যবসাবাণিজ্য সব দখল নিয়েছে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তবুও আপনার তৃণমূল কর্মীরা আপনার আশায় বসে আছে। আপনি তৃণমূল নিয়ে একটু চিন্তা কইরেন আপা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখব, সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাও। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে। সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলে দাও।’
https://www.facebook.com/newyorkbangla/videos/2414128855590921