সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় দণ্ডিত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে মাহমুদুর রহমান আত্মসমর্পণ করে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন মাহমুদুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়া হয় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। সেনাসদস্যদেরকেও দেখা যায় নিরাপত্তার দায়িত্বে।
শুনানিতে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, তার মক্কেল আইনের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল। কখনো বাড়তি সুবিধা চাননি। আইনজীবী আসামির প্রথম শেণির ডিভিশন দেওয়ার নির্দেশনা চাইলে বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ মামলায় গত বছরের ১৭ অগাস্ট মাহমুদুর রহমান, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।
বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মামুন বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবার নিয়ে কানেটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত গোপন তথ্য পেতে এফবিআইএ-এর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় নিউ ইয়র্কের একটি আদালত।
ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ অগাস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৭ ও ১২০ (বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় এই মামলা দায়ের করেন। সেখানে বলা হয়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এতে মাহমুদুর রহমানকেও অভিযুক্ত করা হয়।
বার বার কারাগারে
খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবান্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাড়ে তিন বছর জেলে থাকার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমান জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি লন্ডনে চলে যান। কিছু দিন থাকেন মালয়েশিয়ায়। এরপর তুরস্কে।
শেখ হাসিনার আমলে গত দশকে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে ১২৪টি মামলা করা হয়েছিল। সাড়ে ৫ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত শুক্রবার তিনি দেশে ফেরেন। তার মা গুরুতর অসুস্থ। ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর মাহমুদুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা সব বিপ্লবী শহীদদের কথা স্মরণ করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী আইকন আবু সাঈদ। সাঈদসহ সকল শহীদ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা তাদেরকে কখনও ভুলবো না।
জয়কে হত্যাচেষ্টা মামলার আরেক আসামি সাংবাদিক শফিক রেহমানকে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিএনপিঘনিষ্ঠ এই সম্পাদককে।
পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ১৮ অগাস্ট তিনি দেশে ফেরেন।