আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মন্তব্য করেছেন যে আওয়ামী লীগ আবার অতীতের মতো ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়।
হানিফের এই বক্তব্য দলের দৃঢ় অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
মাহবুবউল আলম হানিফ এর প্রেস সচিব মোহা. তারিক-উল-ইসলাম টুটুলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে হানিফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে যখন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো তখনও এরকম একটা ধাক্কা এসেছিলো। সেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো। অতএব, এবারের ঘটনায় এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে, এই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আবার অতীতের মতো ঘুরে দাঁড়াবে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে এই বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, এবং সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দলটির নেতৃত্ব ও সমর্থকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাগুলোর ফলে সাবেক সরকারের নেতাদের ওপর আইনি চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিবৃতিতে হানিফ আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদারের দেওয়া বক্তব্য ‘আওয়ামী লীগ ছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে’ এবং আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে ১০ বছর দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করার যে নীলনকশা করা হচ্ছে তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার যে হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ধরণের অপতৎপরতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন কমিশন সংস্কার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে সমালোচনা করেছেন অনেকে। সমালোচকদের মতে, তিনি একদিকে গণতন্ত্রের কথা বললেও, অপরদিকে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দলকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এই দলটির নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং দেশের রাজনীতিতে এর দীর্ঘকালীন প্রভাব রয়েছে।
দেশের সমস্ত উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা যে দলের হাত ধরে এসেছে, সেই আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচনের কথা বলা অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দাবি করছেন, এই দলকে ছাড়া দেশে অতীতে কোনো নির্বাচন হয়নি, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আইয়ুব খানের শাসনামল থেকে শুরু করে প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছে। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার শেকড় বাংলার মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত।