ঘূর্ণিঝড় হেলেনের আঘাতে প্রাণহানি বাড়ছে। রোববার পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যা গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই দুর্যোগের প্রভাবকে চরমে নিয়ে গেছে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১০টি স্টেইটে অসংখ্য পরিবার বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ চলছে, তবে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় হেলেন প্রথমে ফ্লোরিডা স্টেইটে আঘাত হানে, তখন এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩১ থেকে ১৫৫ কিলোমিটার, যা ক্যাটাগরি ৪ মাত্রার ঝড় হিসেবে বিবেচিত। ফ্লোরিডা উপকূলে আঘাত হানার পর এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়।
যদিও এর শক্তি কিছুটা কমে যায়, তবে ঘূর্ণিঝড়টি পাঁচটি রাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঝড়ের ফলে গাছপালা এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালনের খুঁটি উপড়ে পড়ে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক পরিবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়। এই ঝড়ের কারণে প্রচুর বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি স্টেইটে কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে। এগুলো হলো আলাবামা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা ও টেনেসি।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও এএফপির করা হিসাবে ঘূর্ণিঝড় হেলেনের আঘাতে দক্ষিণ ক্যারোলাইনায় ২৪ জন, জর্জিয়ায় ১৭, ফ্লোরিডায় ১১, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১০ ও ভার্জিনিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় হেলেনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য অ্যামেরিকার ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এফইএমএ) আট শতাধিক সদস্য মোতায়েন করেছে। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রীয় সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধার অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
পাওয়ার আউটেজ ডটইউএস নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যামেরিকা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়। আজ রোববার এই ওয়েবসাইটে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় হেলেনের আঘাতে অ্যামেরিকার দক্ষিণ-পূর্বের ফ্লোরিডা থেকে শুরু করে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের ইন্ডিয়ানা পর্যন্ত ১০টি স্টেইটের ২৬ লাখের বেশি পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
অ্যামেরিকার ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানায়, হেলেন এখন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এদিকে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস বলেছে, আজ রোববার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে ঘূর্ণিঝড় হেলেনের ধ্বংসযজ্ঞকে ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে বর্ণনা করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে গতকাল হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অ্যামেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক সংস্থার প্রধান ডিন ক্রিসওয়েল ও স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লিজ শেরউড প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বন্যাকবলিত অঞ্চলজুড়ে মর্মান্তিক প্রাণহানির বিষয়ে অবহিত করেছেন।
সাধারণত জুন থেকে শুরু করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ শক্তিশালী ঝড় আঘাত হানে আগস্টের শেষের দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে। স্থানীয় আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে অ্যামেরিকা উপকূলে জয়েস ও আইজ্যাক নামে দুটি হারিকেন আঘাত হানতে পারে।
previous post