মণিপুরে বর্তমানে খুব বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে না বলে মন্তব্য করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি এই মন্তব্যটি নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে করেছেন, যা নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মণিপুরে সাম্প্রতিককালে সহিংসতা এবং অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল, যা দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। তবে অমিত শাহের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে এবং আগের মতো বড় ধরনের সংঘর্ষ আর ঘটছে না।
অমিত শাহ বলেন, গত সপ্তাহে তিন দিনের সহিংসতা বাদে মণিপুরে গত তিন মাসে কোনো বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। যদিও তিন দিনের সেই সহিংসতার কারণে এবং তার আগে উপর্যুপরি ড্রোন হামলা এবং পরে রকেট হামলার কারণে মণিপুরে ভালো রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
মণিপুরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় গত ৭ দিনে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়, যা রাজ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি করে। এই সহিংসতার কারণে রাজ্য সরকার মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ জারি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও পদক্ষেপ হিসেবে পুরো রাজ্যজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
গতকালের পর থেকে মণিপুরে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় প্রশাসন আংশিকভাবে কারফিউ শিথিল করেছে। চারটি জেলায় এই কারফিউ শিথিল করা হয়েছে, এবং এর পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবাও পুনরায় চালু করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, সাম্প্রতিক সহিংসতার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং নতুন করে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে, যদিও প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘মণিপুরে সহিংসতার মাত্রা কমেছে। রাজ্যে স্থায়ীভাবে শান্তি ফেরাতে সব পক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা একটি পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) তৈরি করেছি এবং (শান্তি নিশ্চিত করতে) সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
অমিত শাহ জানান, বিজেপি-শাসিত মণিপুর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা এ মুহূর্তে কেন্দ্র সরকারের নেই। তবে সংবাদ সম্মেলনের সময় সাংবাদিকরা বারবার মুখ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা এবং তাঁর অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে অমিত শাহ কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের তর্ক করতে নিষেধ করেন এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা এড়িয়ে যান।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, মণিপুরে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে এন বীরেন সিংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, কেন্দ্র সরকার আপাতত তাঁর নেতৃত্ব পরিবর্তনের পথে যাচ্ছে না।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরের অশান্তির একটি প্রধান কারণ হিসেবে আংশিকভাবে উন্মুক্ত ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ মণিপুরের সমস্যার মূল কারণ। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারত সরকার ১,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৩০ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে, এবং পুরো ১,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়া দেওয়ার জন্য বাজেট অনুমোদিত হয়েছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্ত অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তা হুমকি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা মণিপুরের সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অবাধে চলাচল (ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম) বাতিল করার বিষয়টিও তুলে ধরেন অমিত শাহ। সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকজনকে কোনো নথি ছাড়াই একে অপরের অঞ্চলে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারতেন। শাহ জানান, এখন শুধু ভিসা নিয়েই মানুষ একে অপরের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারেন।
রাজ্যের নিরাপত্তা পরিকাঠামোতে ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ত্রুটিগুলো যথাযথভাবে ঠিক করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।