মনে আছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা। পুলিশের গুলির সামনে ওই শিক্ষার্থী দুই হাত প্রসারিত করে বুক মেলিয়ে ধরেছিলেন। মৃত্যু নিয়ে এতটুকু ভয় পাননি। অধিকার আদায়ে প্রাণ দিলেন বীরের মতো। মুহূর্তেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে সেই দৃশ্য। নতুন গতি পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
নিহতের প্রায় আড়াই মাস পর প্রকাশিত হয়েছে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। এতে দেখা যায়, পুলিশের শটগানের গুলিতে পুরো শরীর ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল আবু সাঈদের। হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। এ ছাড়া তার মাথার মধ্যভাগ থেকে পশ্চাৎ ভাগ পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ওই দিনের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, আবু সাঈদের কানের ওপরের দিকে মাথার খুলিতে দৈর্ঘ্যে ৩ ইঞ্চি ও প্রস্থে দেড় ইঞ্চি আয়তনের গর্ত ছিল, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। এ ছাড়া বুক, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট ছোট রাবার বুলেটের গর্ত ছিল। সেখান থেকেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাথার আঘাত, শরীরের রক্তক্ষরণের কারণে আবু সাঈদ শকে চলে যান। এতে তার মৃত্যু হয়।
গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ অন্তত ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন।
আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ছররা গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। ১০ মিটারের মধ্যে গুলি করায় আবু সাঈদের শরীরের ভেতরের কিছু অঙ্গ ফুটা হয়েছিল। যার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।
আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা করে। পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলাই তদন্ত করছে পিবিআই। আবু সাইদের আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে। ফলে বলা যায় এটি হত্যাকাণ্ড। এই রিপোর্ট অনুযায়ী কোনোভাবেই আসামিরা ছাড় পেতে পারবে না।
এদিকে আবু সাঈদের সহপাঠীরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দায়ী। তাদের চাওয়া, সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলা যেন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার কাজ করা হয়। যে ছেলে তার বুক পেতে দিয়ে জীবন দিলে তার বিচার সঠিকভাবে হবে না এটা কখনও হতে দেওয়া যাবে না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
