চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কিছু কারখানা পাকিস্তানীদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানিগুলিকে ইজারা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি) এবং বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) তাদের মালিকানাধীন পাটকল এবং টেক্সটাইল মিলগুলি পরিচালনা ও পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং সরকার সেগুলোকে মালিকানায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। সরকারও তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, তহবিলের অভাব, অতিরিক্ত জনবল, অস্বাভাবিক হারে পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ। প্রথমদিকে রীতিমতো লুটপাট হয়। লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, শ্রমিকদের মজুরি, বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিচালনা-ব্যবস্থাপনার নামে মিলগুলোতে লুটতরাজ শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে বেসরকারি খাতকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বিভিন্ন সময়ে মিলটিতে ৩০টি লিজ দেওয়া হয়। ব্যাংক থেকেও ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু লিজগ্রহীতারা কারখানা চালাতে পারেননি। রাষ্ট্র থেকে বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার আগেই মিলের শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়।
মজুরি, বেতন, বকেয়া মোটা অংকের টাকার বোঝা সরকারকে দিতে হয়। ব্যক্তিমালিকানায় দেওয়ার পর সরকার কর্তৃক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের শর্ত রাখা হয়। কিন্তু ক্রেতারা কেউই এ শর্ত রাখেননি।
অভিজ্ঞ, দক্ষ শ্রমিকদের সাময়িকভাবে স্বল্প মজুরিতে কাজে নেওয়া হয়। কিছুদিন পরই তাদের বাদ দেওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শ্রমিক-কর্মচারীরা সরকারের জন্য বড় রকমের বোঝা হয়ে ওঠে।
মিল-ফ্যাক্টরিগুলোর মেশিনারি অনেক পুরোনো, ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে অনেক আগেই। নতুন আধুনিক মেশিন দিয়ে পুনঃস্থাপন জরুরি হলেও সরকার তা করতে পারেনি অর্থাভাবে। ব্যক্তি খাতে লিজ দেওয়ার পর তারাও সুবিধা করতে পারেননি।
মিল-কারখানাগুলো নিয়ে নানা ব্যর্থ এক্সপেরিমেন্টের পর এগুলো সরকারের ঘাড়ে বোঝা হয়েই রয়েছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আর কোনো রকম এক্সপেরিমেন্ট না করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করতে চাচ্ছে।
তাদের প্রয়োজন, চাহিদা অনুযায়ী সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তার দেশের আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের আনার অনুরোধ করা হয়েছে। পাকিস্তানে বেসরকারি খাত যথেষ্ট দক্ষ, অভিজ্ঞ।
বস্ত্র ও পাটশিল্পে বিনিয়োগে তারা আগ্রহী হবে মনে করেই মিলগুলো তাদের হাতে ছাড়তে চাচ্ছে। রীতিমতো দায়মুক্তির পথ খুঁজছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে পাট খাতে দুটি ও বস্ত্র খাতে দুটি ফ্যাক্টরি পাকিস্তানের শিল্পপতিদের কাছে দেওয়া হবে।
তারা পরে আগ্রহী হলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আরও কয়েকটি মিল তাদের কাছে দেওয়া হবে। ৯৯ বছর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকবে প্রকৃতপক্ষে তাদের হাতেই। তবে সরকারের হাতে মালিকানার একটি অংশ থাকবে। শ্রমিকদের কাছে রাখার বিষয়ই প্রধান শর্ত।
