শুভ জন্মদিন-ফিনিক্স পাখি
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট কিন্তু এর জনসংখ্যা এত বেশি যে এখানে চলমান ঘটনা প্রবাহ মানুষকে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত রাখে।যে যতই নিজেকে রাজনীতিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুক কেউ এই রেডিয়াসের বাইরে নয়।বঙ্গবন্ধু কন্য্যা নিজেও জানতেন না তেল-নুনের পাট চুকিয়ে তাকে একদিন বাংলাদেশের হাল ধরতে হবে।
১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে খুন হন নিজ দেশের আর্মির হাতে তখন দৈবক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।৬ বছরের নির্বাসন শেষ শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে এসে হাল ধরেন আওয়ামী লীগের।সেই ১৯৮১ সাল থেকে বারংবার ফিনিক্স পাখির মতো শত্রুর আক্রমণকে ছিন্ন করে বেঁচে থাকাও যেন এক কাজ হয়ে দাঁড়ায় শেখ হাসিনার।
আজকে যারা এবি পার্টি তাদের মতোই এক পার্টি ছিল ১৯৮১ সালে,সেই পার্টির নাম ফ্রিডম পার্টি।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সব আর্মিরা মিলে মূলত এ পার্টি তৈরী করে।শেখ হাসিনা ফিরতে না ফিরতেই ১৯৮১ সালে ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারী ক্যাডাররা আক্রমণ চালায় শেখ হাসিনার উপর।ভয়ানক হামলা হয় ১৯৮৮ সালে লালদিঘী ময়দানে।এখানে যে সশস্ত্র হামলা হয় তাতে মারা যায় ৭জন,আহত হয় ৩০০ জন।সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই পুলিশ ও বিডিআর গুলি করেছিলো।
১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফারুক-রশিদের সেই ফ্রিডম পার্টি আবার ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেখানে হাসিনা থাকতেন গুলি চালায়,গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।গ্রেনেডটি রয়ে যায় অবিস্ফোরিত।
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রিনরোডে লীগের পরিকল্পনা অফিসের সামনে আবার বিএনপির ওয়াহিদ গ্রুপ ২০/২৫ রাউন্ড গুলি চালায়।১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর এএল স্টেশনে ঢুকার মুখে যে ট্রেনে শেখ হাসিনা ছিলেন সেই ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়।১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর আবারও গুলি বর্ষণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সভামঞ্চ লক্ষ্যে করে বোমা নিক্ষেপ,গুলি বর্ষণ সবই চলে।২০০০ সালে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা রাখা হয় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়।সেখানে শেখ হাসিনার জনসভা ছিল পরেরদিনই।
এই আক্রমণ চলেছে ধারাবাহিকভাবে।২০০১ সালে খুলনায় বোমা পুঁতে রাখে হরকাতুল জিহাদ।২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে একই কায়দায় হরকাতুল জিহাদ আক্রমণ চালায়।২০০২ শালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গাড়িবহরে আক্রমণ চালায় বিএনপি ক্যাডাররা।২০০২ সালে নওগাঁতেও শেখ হাসিনা আক্রমণের শিকার হন।২০০৪ সালে বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলি বর্ষণ করা হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি বদলে যায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে বিএনপির তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ অর্থায়ন ও পরিকল্পনার জঙ্গী গোষ্ঠী।সেদিন প্র্যাত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ৪শ নেতাকর্মী আহত হন।আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে সাব জেলে রেখে শুরু করে ‘স্লো পয়জনিং’। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে পাকিস্তান চুক্তি করে শেখ হাসিনাকে মারার জন্য। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আর্মি ব্যর্থ ক্যু করে,এ ক্যুর পরিকল্পনায় ছিল খালেদা জিয়া,তারেক জিয়া ও জামায়েত ইসলামী।২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি বোমা বিস্ফোরণ করে।২০১৫ সালে কারওয়ানবাজারে গাড়িবহরে হামলা কররা হয়।
শেখ হাসিনার পুরো পরিবারের ইতিহাস যদি দেখা হয় তাহলে বুঝা যাবে এক অকৃতজ্ঞ জাতির জন্য তারা বারবার শুধু জীবন বাজি খেলেছেন।১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে চালানোর জন্য তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়,সে সাথে মোকাবেলা করতে হয় নিজের দেশের শত্রুদের ষড়যন্ত্র,সাথে বিদেশীদের ষড়যন্ত্র তো সবসময় ছিলই।সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে যা দোষ ত্রুটি সমালোচনা ছিল বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারকে নিয়ে তা পুরো পরিবারের রক্তের নদী দিয়ে ধুয়ে মুছে দিয়ে গিয়েছেন।
আজকে শেখ হাসিনা আবার নির্বাসনে ভারতে সেই ১৯৭৫ সালের মতো।তার দোষ গুণের আলাপ আজ অবান্তর।তিনি শুধু ১৫০ জঙ্গী সংগঠনকে বোতলে ভরে রেখেছিলেন যারা ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অবৈধ ইউনুস গভ: বসার সাথে সাথে ছাড়া পেয়ে যায় এবং সারাদেশে তৈরী করে এক ভয়ের রাজত্ব।মাত্র ৮০০ জঙ্গীকে ছেড়ে দেয়া হয় বিভিন্ন জেল থেকে।আর কোনকিছুর দরকার নেই শুধু এই এক কারণেও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষের স্মরণ করতে হবে আগামী অনেক বছর।
শেখ হাসিনা হয়তো এ দেশের মানুষের জন্য আর কোনদিন সংগ্রামের সেই দৃপ্ত ত্রিশূল তুলে নিবেন না কারণ প্রাকৃতিক নিয়মে আজকে এই মহান নারী ৭৭তম জন্মদিন অতিক্রম করে ৭৮ বছরে পদার্পণ করছেন।
শেখ হাসিনাও তার বাবার মতো এদেশের ঋণ শোধ করেছেন বহু আগেই।জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানবেন জননেত্রী।আপনার কোন দায় এদেশের প্রতি আর নেই।যেখানে থাকেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন।বাংলাদেশের মানুষ আপনার সাথে যা করেছে তার দায় চুকাবে আগামী কয়েক দশক।
সংগৃহীত বাংলাদেশ চাও?