অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার অল্প দিনের ভারতে এবার ইলিশ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ভারতে মাছ পাঠানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা বলে তার মাছ পাঠানো ঠিক হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নয়াদিল্লি ও কলকাতায় হু হু করে বাড়তে থাকে এ মাছের দাম। ভারতে একটি ইলিশ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার টাকায়ও বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুর্গাপূজার আগে ইলিশ পেতে অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছিল ভারত। এরপরও মন গলছিল না অন্তবর্তীকালীন সরকারের।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা স্পষ্ট বলে দেন- আমরা ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। আমরা দেখেছি আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারেন না। কারণ, সব ভারতে পাঠানো হয়। যেগুলো থাকে সেগুলো অনেক দামে খেতে হয়। আমরাও দুর্গোৎসব পালন করি।
ইলিশ নিয়ে হঠাৎ কঠিন অবস্থা থেকে সরে এসেছে সরকার। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। আদেশে বলা হয়, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন রপ্তাণিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।
ভারতে ইলিশ রপ্তানী নিয়ে সরকার হঠাৎ এমন অবস্থান পাল্টানোয় নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেউ বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন, কেউ সরকার এটিকে সরকারের দুর্বলতা বলে মন্তব্য করছেন। ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে মুখ খুলেছেন দেশের জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ।
ভারতে ইলিশ রফতানির বিষয়টি সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এখানেই শেষ করেননি। সমালোচকদেরকে প্রিন্স মাহমুদ মনে করিয়ে দিলেন- ভুলে না যাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে কলকাতার শিক্ষার্থী বন্ধুরা কীভাবে ফুঁসে উঠেছিল। বন্ধুদের পুজো দুর্দান্ত হোক।
প্রিন্স মাহমুদ বুঝাতে চাইলেন, ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানির বিষয়টি ভারতের জনগণের প্রতি অনেকটাই প্রতিদান। ইলিশকাণ্ড নিয়ে প্রিন্স মাহমুদের প্রতিক্রিয়া এখানেই শেষ নয়। ইলিশ নিয়ে তার পোস্টের পর নেতিবাচক মন্তব্যে আঘাতপ্রাপ্ত হতে থাকেন। এমনকি যারা তার মতো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি সমর্থক ছিলেন, তাদের পক্ষ থেকেও নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এমনকি পূজার উপহার হিসেবে ভারতে ইলিশ রফতানির সমর্থন করায় প্রিন্স মাহমুদের ধর্মবোধ নিয়েও কথা বলতে দ্বিধা করেননি কেউ কেউ।
ফলে নিজের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এসে আরও কিছু কথা জানালেন প্রিন্স মাহমুদ। এবার আর ইলিশ কিংবা প্রতিদান বিষয় নয়। নিজেকে জানান দিলেন
প্রিন্স মাহমুদ। বললেন- যারা রাগ হচ্ছ, হও। আমাকে নিয়ে দুই জনের লেখা দেখছি। ইবাদত আমি কম করি না। নামাজ খুব একটা কাজা হয় না। সোম ও বৃহস্পতি রোজা রাখি। আজকেও রোজা রাখছি। রাগ বেশি, কিন্তু ভেতর পরিষ্কার। আমার দোয়া কবুল হয়। নিশ্চিত হয়।
জন্ম থেকে বুখারি শরিফের প্রতিটি খণ্ড আমার বাসায় আব্বার রেখে যাওয়া। অতএব নব্য মুসলিম হয়ে আমাকে কেউ হিন্দু বানায় দিতে এসো না। লাভ নাই। কিসসু কেয়ার করি না। কারও কাছে ভালো হওয়ারও দরকার নাই। মন্দ হওয়ারও দরকার নাই। কাউকে ভয় পাই না। মন যেটা বলে সেটাই বলে যাই। ২০০৯ সালে হজ করেছি। ফেসবুকে এসে অতিকায় মুসলমান হিসেবে নিজেকে জাহির করি নাই। মানুষ হিসেবে যেটুকু বলার বলছি।
বলা দরকার, দেশের অন্যতম সফল সংগীত স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ জুলাই বিপ্লবকে সমর্থন দিয়ে প্রায় প্রথম সারিতে ছিলেন। রাজনৈতিকভাবে বরাবরই সরব রয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর মধ্যে সম্প্রতি তাকে যুক্ত করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২৩ জুরিবোর্ড সদস্য হিসেবে।
